বিএনপির মহাসমাবেশে যোগদানের জন্য এসে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীকে বৃহস্পতিবার প্রিজনভ্যানে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় -মামুনুর রশিদ
বিএনপির মহাসমাবেশে যোগদানের জন্য এসে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীকে বৃহস্পতিবার প্রিজনভ্যানে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় -মামুনুর রশিদ
রাজধানীর নয়াপল্টনের হোটেল মিডওয়ে ইন্টারন্যাশনালের অভ্যর্থনা কক্ষে সারি করে রাখা হয়েছে ছোট-বড় ট্রাভেল ব্যাগ। এর ওপর কাগজের ট্যাগে ব্যাগের মালিক ও তাঁর কক্ষ নম্বর লেখা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মিডওয়েতে গিয়ে দেখা যায়, মালিকহীন ৫০-৬০টি ব্যাগে ট্যাগ বাঁধা। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার মধ্যরাতে সেখানে ধরপাকড় চালানো হয়। যাদের ধরে নেওয়া হয়েছে, তারা বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে এসে ওই হোটেলে উঠেছিলেন। পুলিশ গ্রেপ্তার করে নেওয়ার পর তাদের রেখে যাওয়া ব্যাগ ও মালপত্রে নাম-পরিচয় মিলিয়ে ট্যাগ লাগিয়ে রাখে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
বিএনপির দাবি, মিডওয়ে ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ পুরোনো ও নতুন ‘গায়েবি মামলায়’ গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশের ভাষ্য, সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বুধবার রাতে ৪৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে বিএনপির ৩৬৬ জন। আগের দিন গ্রেপ্তার করা হয় ৭৫ জনকে।
মহাসমাবেশের আগেই দু’দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে ৪৮২ নেতাকর্মীকে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও বিএনপি নেতাকর্মীর গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তল্লাশি চালানো হয় ঢাকামুখী যানবাহনেও। রাজধানীর প্রবেশপথে গতকাল রাত থেকে তল্লাশি জোরদার করা হয়।
আওয়ামী লীগের তিন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ও বিএনপির ঢাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ভেন্যু নিয়ে দু’দিন নানা নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবার একপক্ষ অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। এমন বাস্তবতায় কঠোর অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দু’দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, বেশ কিছুদিন ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হলেও বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ রাজধানীজুড়ে পুলিশি তৎপরতা ও শত শত গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেউ কেউ রাজনৈতিক দৃশ্যপটের নতুন মোড় বলে মনে করছেন। চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বিভেদরেখা আরও স্পষ্ট হওয়ার শঙ্কা কারও কারও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপিসহ একটি অশুভ রাজনৈতিক শক্তি দেশে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা আন্দোলন ও সমাবেশের নামে জ্বালাও-পোড়াও, গাড়ি ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে থাকে। এটাই দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন তাদের জায়গা থেকে দৃষ্টি রাখবে, আমরাও রাজনৈতিকভাবে এগুলো মোকাবিলার পাশাপাশি সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ক্ষমতাসীন সরকার ধ্বংস করেনি, দলীয়করণ করেনি। সীমাহীন লুটপাট আর অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। একটা সময়ে শান্তিপূর্ণ জনতা ঘুরে দাঁড়ায় এবং গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। সরকারের কোনো ভয়ভীতি আর নির্যাতন গণঅভ্যুত্থানকে ঠেকাতে পারবে না। জনগণ এখন জীবন দিতেও প্রস্তুত।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ করে পুরোনো ও নতুন গায়েবি মামলায় পুলিশ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে।
রাতের আঁধারে বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগের বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেনি পুলিশ। এ ধরনের কোনো অভিযোগও নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখব। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তারা সন্দেহভাজন বা নিয়মিত মামলার আসামি। অনেকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। আশুরা উপলক্ষে এটি ডিএমপির নিয়মিত অভিযান। ২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা হয়েছিল। এটি আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ, এটি চলবে।
আজ বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ব্যানারে শান্তি সমাবেশ এবং রাজপথে সতর্ক পাহারা বসানোর ঘোষণা দিয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা বলছেন, বিএনপি শুক্রবারের মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা-সন্ত্রাস ঘটাবে বলে শঙ্কা রয়েছে। আবার সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো এবং বিদেশিদের কাছে জনসমর্থন দেখানোর লক্ষ্যেই বিএনপি হয়তো বা এই মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপি সুযোগ পেলে সরকার পতনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করতে পারে বলেও সংশয় রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা অচল করার মতো পদক্ষেপও নিতে পারে তারা। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও এমন ইঙ্গিত দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এ কারণে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতেই তিন সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশ ঘিরে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীনরাও।
ধরপাকড়ে অতিথিশূন্য হোটেল
মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানীর বেশ কিছু হোটেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। গতকাল হোটেল মিডওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ভিক্টোরিয়া, ফকিরাপুলে হোটেল আস-সালাম, হোটেল আল-আজিজসহ কয়েকটিতে সরেজমিন গিয়ে ম্যানেজার ও কর্মীদের সঙ্গে কথা হয়। মিডওয়ে হোটেলের ম্যানেজার ওয়াহিদ সরকার বলেন, বুধবার ডিবি পুলিশের সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মী ধরে নিয়ে গেছে। যাদের নামে মামলা আছে, তাদের নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। গতকাল অন্য যেসব গেস্ট ছিলেন, তারা সবাই ভয়ে হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন। হোটেল এখন অতিথিশূন্য। বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে সাধারণ অতিথিও হোটেলে ছিল।
হোটেল আস-সালামের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের হোটেলে ৪৮টি রুম আছে। এর মধ্যে কয়েক দিন ধরে ২৮টি ফাঁকা। পুলিশের ভয়ে অতিথিরা আসছেন না। হোটেল আল-আজিজের এক কর্মকর্তা বলেন, বুধবার বিকেল ৩টার দিকে মতিঝিল থানা পুলিশ এসে হোটেল তল্লাশি করে দু’জনকে নিয়ে গেছে। এ সময় আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে আমরা সতর্ক আছি। কে মামলার আসামি, কে কোন দল করে– সেটা বোঝার উপায় নেই।
ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, মিডওয়ে থেকে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা নাশকতা ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর পরিকল্পনা করছিল বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মুগদা, পুরান ঢাকাসহ আরও কয়েকটি স্থানে পুলিশের ধরপাকড়ের খবর পাওয়া গেছে। অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দেন। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীর বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লালবাগের বাসা থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মীর আশরাফ আলী আজম এবং তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার মীর মুনতাহা আলীকে আটক করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, ডিবি পুলিশের সদস্যরা পিটিয়ে আশরাফ আলীর পা ও কোমর ভেঙে দেন। এ সময় তাঁর ছেলেকে আটক এবং ছেলের স্ত্রীর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়। অবশ্য লালবাগ থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলছেন, মীর আশরাফ আলী তিনতলার জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এতে তাঁর পা ভেঙে যায়। তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির দাবি, পুরান ঢাকার কোতোয়ালি এলাকা থেকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকে আটক করে পুলিশ। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানায়, বাবুবাজার চেকপোস্টে তল্লাশির সময় রবিউল মোল্লা ও আকাশ নামে দু’জন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা চালায়। তাদের আটক করেছে পুলিশ। মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া থেকে বিএনপি নেতা আবদুল কুদ্দুস আকনকে বুধবার রাতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন স্বজনরা।
একইভাবে মিরপুরের বিভিন্ন স্থান থেকেও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। তবে একটি সূত্র বলছে, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৯ নেতাকর্মীকে মিরপুর থেকে আটক করা হয়।
এদিকে মহাসমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অন্য সময়ের মতো একত্রে না এসে খণ্ড খণ্ড ভাগে ঢাকায় আসার কৌশল নেন।
৪৮২ জন কারাগারে
গ্রেপ্তার ৪৮২ নেতাকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানা থেকে আটক এসব নেতাকর্মীকে বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া চারজনের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বলছেন, সমাবেশে আসা নেতাকর্মীকে ভয়ভীতি দেখাতেই গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এটিকে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক বলা ঠিক হবে না।
নেতাকর্মীকে গণগ্রেপ্তার না করতে গতকাল রাতে ডিএমপি কমিশনারকে ফোন করে অনুরোধ জানান বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী।
শর্তে যা আছে
ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে পাঠানো আলাদা চিঠিতে ২৩টি করে শর্তের কথা বলা হয়। স্থানের শর্ত ছাড়া দু’দলের জন্য ২৩ শর্তের প্রায় সব একই। শর্তের মধ্যে রয়েছে– বিএনপিকে অনুমোদিত স্থানেই (পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং থেকে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে) মহাসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশে আগতদের মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা। শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। মহাসমাবেশের কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। বিএনপিকে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে। উস্কানিমূলক কোনো বক্তব্য দেওয়া বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। আর আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনকে দক্ষিণ-পূর্বে মহানগর নাট্যমঞ্চ, দক্ষিণে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, দক্ষিণ-পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং ও পশ্চিমে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়।
রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তাবলয়
দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে আজ রাজধানীজুড়ে থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি আনসার, আর্মড পুলিশ (এপিবিএন) থাকবে। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) স্ট্যান্ডবাই থাকছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হবে। দু’দলের সমাবেশস্থলের মধ্যবর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তাবলয় তৈরি করবে পুলিশ। গতকালও নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল।
সেখানে সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায় পুলিশকে। এ ছাড়া দলীয় কার্যালয়ের প্রধান গেটের দু’পাশে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান নেন। এ সময় ছবি ও ভিডিও সংগ্রহের সময় কয়েক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন নিয়ে নেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্যাট্রল-মতিঝিল) আবদুল্লাহ-আল-মামুন। তবে মামুন বলেন, ‘ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক পরিচয়ধারী এবং ইউটিউব ও ব্লগারদের ছবি বা ভিডিও করতে দেওয়া হবে না।’
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল এ এম জাহিদ পারভেজ বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি সদস্য স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। ডিএমপি চাইলে পুলিশের পাশাপাশি তাদের পাঠানো হবে।
রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দেওয়া যাবে না
ভেন্যু ঘিরে নানা নাটকীয়তার পর গতকাল বিকেলে মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, অভিন্ন ২৩ শর্তে দুই দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করেন তিনি। সমাবেশে ব্যাগ, লাঠিসোটা নিয়ে না আসার অনুরোধ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, দু’দলের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, এমন কোনো কাজ কেউ করবেন না। স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করবেন।
বড় দু’দলকে একই দিনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে, নাকি ‘সহানুভূতিশীল হয়েই’ তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে– জানতে চাইলে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের কাছে এ মুহূর্তে বড় কোনো থ্রেট নেই। যেহেতু বড় দুটি দলের বড় সমাবেশ, তাই যে কোনো কুচক্রী মহল বা যে কেউ এই সমাবেশের সুযোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে।
পাঠকের মতামত